মোহাম্মদ মেহেদী হাসান,মনপুরা উপজেলা প্রতিনিধি
ভোলার মনপুরায় শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলোতে চায়না দুয়ারী বা চায়না জাল ব্যবহার করে মাছ শিকারে ব্যস্ত অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এতে দেশীয় মাছ বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়ছে জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র। মনপুরার মেঘনা নদীর তীরে জনতা ঘাটের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবৈধ জাল দিয়ে চলে এমন মাছ শিকারের মহোৎসব।
সরেজমিনে দেখা যায়, মনপুরা উপজেলার মেঘনা নদীর তীরে বিভিন্ন স্থানে চায়না জাল পেতে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে ৪ নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের জনতা ঘাট এলাকায় মেঘনা নদীর তীরে চায়না জাল পাতা অবস্থায় দেখা যায়। ১ মার্চ থেকে মনপুরার মেঘনায় কয়েক কিলোমিটার এলাকায় মৎস্য অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হলেও সেখানে চায়না জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে জনতা ঘাটের উত্তর-পশ্চিম হতে শুরু হয়ে ৩ নং উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ও হাজীরহাট ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে জাল পেতে ধরা হচ্ছে দেশীয় প্রজাতি ছোট-বড় সব ধরনের মাছ।
মনপুরা উপজেলার হাজীরহাট ইউনিয়ন এর বেলায়েত মাঝি (৪৫) বলেন। বাপ-দাদার পেশাটাকে ধরে রেখে অবরোধের আগে নিয়মিত পাশের মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যেত সে । তবে আমাদের জালে আর আগের মতো মাছ উঠে না। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত নদীতে দুইবার জাল ফেলতেন তিনি । তার দলে আরও ৫ জন রয়েছেন। তবে এখন আর আগের মতো তেমন মাছ পাচ্ছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক , জেলের ঘরে জন্ম আমাদের। মাছ ধরা ছাড়া কোনো কর্ম জানা নেই। নদীতে মাছ পাওয়া যায় না আগের মতো। নদীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নিষিদ্ধ চায়না জাল। পোনা থেকে শুরু করে ছোট বড় কোনো মাছই ছাড়া পায় না চায়না জাল থেকে। অবৈধ এই জালগুলো বন্ধ না হলে আগামী প্রজন্ম দেশীয় প্রজাতির মাছের নাম ভুলে যাবে।
জানা গেছে, মনপুরা উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন নদীতে প্রায় ৭ হাজারের মত চায়না জাল বা চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র ৪ নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের জনতা ঘাটের কিছু অংশের মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ১ হাজারের অধিক চায়না জাল বিছানো রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি কম থাকায়, মাঝ নদীতে খন্ড খন্ডভাবে চর জাগায় চায়না জালের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু নদীগুলোতেই নয়, খাল ও বিলে একই পন্থায় মাছ ধরা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চায়না জাল দিয়ে মাছ শিকার করা একজন বলেন, ৪টি লোহার ফ্রেমের ভেতর জাল দিয়ে তৈরি করা হয় চায়না জাল। নদীতে বিভিন্ন পয়েন্টে ৫ টি চায়না জাল পেতেছি। আমার মত অনেকেই এলাকা ভাগ করে চায়না জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে। বিকেলে পেতে রাখা হয়, রাতের বেলা একবার এবং ভোরের দিকে একবার জাল তুলে মাছগুলো সংগ্রহ করি। পরে সেই তাজা মাছগুলো স্থানীয় বাজারে বেশি দামে বিক্রি করা হয়।
মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, চায়না জাল বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়ায় স্থানীয় জাল বিক্রেতাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জাল ক্রয় করা হয়। মাঝে মাঝে নদীতে অভিযান হলে কয়েকটি জাল পুড়িয়ে দিলেও অধিকাংশ জাল দালালের মাধ্যমের ফেরত নেওয়া হয়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন। মনপুরার মেঘনায় চায়না দুয়ারি জাল পরতে পারে এটা আমাদের কল্পনার বাহিরে ছিলো। আমাদের জানা মতে এই চায়না দুয়ারি জাল গুলো সাধারণত খাল বিলে বেশি বসানো হয়। এই সকল জাল গুলো সাধারনত পানির নিছে বসানো হয় যেই কারণে আমাদের চোখ এড়ানো যায়। আমাদের কাছে চায়না দুয়ারি জালের আরো কিছু তথ্য আসছে। আমরা মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় গ্রাফি টেনে দেখবো যদি চায়না দুয়ারি জাল পাওয়া যায় তাহলে এগুলো নষ্ট করে দেওয়া হবে
মোহাম্মদ মেহেদী হাসান
মনপুরা উপজেলা প্রতিনিধি
তারিখ :১৮-৩-২০২৫
মোবাইল : ০১৭২৫৩৭৮৪৬৩।